একজন মুরিদের স্বপ্ন হজ্জ করার
মরহুম হাজী চুনুরুদ্দিন মিয়াঁ, তমলুক, মেদনীপুর ১৯৪৫ইং তে তিনি নিজের জীবনী নিজেই বর্ণনা করেছেন, তখন তাঁর বয়স সম্ভবত ১০০ বছর ছিল।
হাজী চুনুরুদ্দিন সাহেব তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে আমি ভাবছিলাম যে, আমি কোন পীরের কাছে মুরিদ হবো।
কিন্তু কোথায় যাব, কাহার কাছে গিয়ে
মুরিদ হবো? আমি ঠিক করতে
পারছিলেন না। নির্জন রাত্রে মাঠের মধ্যে
চিন্তা মুক্ত হওয়ার জন্য নামাজ শেষে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করতে লাগলাম। এই ভাবে
অনেক দিন আমল করতে থাকলাম। একদিন আমি
ঘুমের মধ্যে স্বাপ্নে দেখলাম হজরত ফারুক(রাঃ) এবং হজরত আলী(রাঃ) দুজন খলাফায়ে
রাশেদীন তাদের পরিচয় করলেন।এবং একজন ব্যক্তিকে দেখিয়ে ইশারা করে তাঁর কাছে যাওয়ার
নির্দেশ দিলেন। এরপর আমি পাগলের মত স্বপ্নে দেখা ব্যক্তির খোঁজ করতে লাগলাম। অতঃপর
১৮৭৫-৭৬ ইং সালে আমি খবর পেলাম যে, কোলকাতা মেছুয়া বাজারের পাশে কলা বাগান চুলিয়া মসজিদে জুম্মার নামাজের পরে
একজন ফকির এসে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে। আমি ওখানে পৌঁছে অনেক খোঁজ করার পরে যখন
তাঁকে পাইলাম আমি তাহার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। এবং ওই ফকিরের সাথে একটা জঙ্গলে
চলে গেলাম। সেই ফকির বলে আমি “মাওলানা আজানগাছী(রহঃ) এর তৃতীয় মুরিদ” হুজুর কেবলা জঙ্গল থেকে বাহির হয়ে নিজের জন্ম ভূমিতে
গিয়ে একটা পুকুরের (পীর পুকুর)পাড়ে তালপাতার ঝুপড়ি করে দ্বীনের কাজ শুরু করেছেন।
ওই পীর পুকুরের পানি সকলের জন্য উপকারী ছিল। অতঃপর হুজুর কেবলা(রহঃ) নিজের জন্ম ভূমি ছেড়ে সাথে
পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে কোলকাতাতে আসেন। হুজুর কেবলার কাছে যে পাঁচ হাজার টাকা ছিল
সেটা নিয়ে তিনি সাবান কারখানার মালিক খাজা বক্স মল্লিকের কাছে জমা রাখেন। তিনি ওই
টাকা নিয়ে তাঁর সাবান তৈরির কাজে লাগিয়ে অনেক টাকা লাভ করলেন। তিনি নিয়েত করলেন এই
টাকা দিয়ে ব্যবসা করব ও লাভংশ্য হুজুর কেবলা কে দেব।
হাজী সাহেব বলেন, আমার জীবনে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। তাঁর মধ্যে একটি, আমি হুজুর কেবলা (রহঃ) কে বললাম হুজুর! আমি হজ্জ
করতে যাব। এই সময়ে হুজুর কেবলা বলেন, তুই কি হাজী হতে চাস? পরে যখন হজ্জের সময় আসে হুজুর কেবলা ডেকে বললেন তুই
না হজ্জে যাবি বলেছিলিস? এই কথা শুনে আমি পায়ে হেঁটে হজ্জের উদ্দেশে রউনা দিলাম। কিন্তু আমি বিহার
পর্যন্ত গিয়ে কিছু বুঝতে পারছিলাম না সেজন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। ঠিক ওই সময় হুজুর
কেবলা আমার হাত ধরে পাহাড়, পর্বত, নদী ও সুমুদ্র
পার করে মক্কা শরিফে পৌঁছে দিলেন। আমি হজ্জের সমস্ত কাজকর্ম ঠিকঠাক ভাবে আদায় করে
যখন বাড়ি ফেরার কথা মনে হল। এমত অবস্থায় আমি দেখলাম যে আমি সিন্ধু নদীর পাশে
দাঁড়িয়ে আছি। পরে নদী পার হয়ে গাড়িতে করে কোলকাতা ফিরে এলাম।

No comments:
Post a Comment