Labels

"সাগিরা গুনাহ কাবিরা গুনাহে পরিণত হওয়ার কারণসমূহ"

সগীরা (ছোট গুনাহ) কিভাবে কাবিরা গুনাহ (বড় গুনাহ) হয়ে যেতে পারে — এই বিষয়টি ইসলামী শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। কিছু ছোট গুনাহ যদি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে হয় বা একাধিক বার ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়, তাহলে সেগুলো বড় গুনাহ হিসেবে পরিণত হতে পারে। নিচে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছি:


🟥 সাগিরা গুনাহ কাবিরা গুনাহে পরিণত হওয়ার কারণসমূহ

১. গুনাহকে হালকা মনে করা

যদি কেউ বলে বা মনে করে:

“এটা তো সামান্য গুনাহ, কিছু হবে না”—
তবে এমন মনোভাবের কারণে সেই গুনাহ গুরুতর কাবিরা গুনাহে রূপান্তরিত হতে পারে।

২. গুনাহ বারবার করা (অভ্যাসে পরিণত হওয়া)

একটি ছোট গুনাহ যদি বারবার করা হয়, এবং তাওবা না করা হয়, তাহলে তা কাবিরা গুনাহে পরিণত হয়।
🔁 বারবার দেখা হারাম জিনিস দেখা, মিথ্যা বলা, গীবত করা ইত্যাদি।

৩. তাওবা না করা ও গাফেল থাকা

ছোট গুনাহকে অবহেলা করা, কখনো তাওবা না করা, এবং আল্লাহর ভয় না থাকা — এগুলো সেই গুনাহকে বড় করে তোলে।

৪. আলেমদের সামনে বা প্রকাশ্যে করা

ছোট গুনাহ যদি এমনভাবে করা হয় যা মানুষকে গুনাহে উৎসাহিত করে বা ইসলামের অবমাননা করে, তাহলে তা বড় গুনাহে পরিণত হয়।

৫. গুনাহ করার সময় আনন্দিত হওয়া বা গর্ব করা

যদি কেউ গুনাহ করে এবং তাতে আনন্দ পায় বা গর্ব করে, তবে এটি কাবিরা গুনাহের চেয়েও বড় হতে পারে।

৬. গুনাহের প্রেক্ষিতে অন্যদের পথভ্রষ্ট করা

একটি গুনাহ যদি অন্যদেরও প্রভাবিত করে — যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীলতা ছড়ানো, গান বা হারাম জিনিস প্রচার করা — তাহলে সেটি আর সাগিরা থাকে না।


🔻 উদাহরণ:

  • মিথ্যা কথা বলা — সাধারণত সাগিরা গুনাহ,
    ❗কিন্তু যদি এটা অভ্যাস হয় বা মানুষকে ধোঁকা দিতে ব্যবহার হয়, তবে তা কাবিরা হয়ে যায়।

  • চোখের গুনাহ (হারাম দেখা) — যদি বারবার দেখা হয়, গর্ব করা হয় বা গোপনে করা হয় তবে এটি কাবিরা


📖 কুরআন ও হাদিস থেকে দৃষ্টান্ত:

হাদিস:

"তোমরা ছোট গুনাহকেও হালকা ভেবো না, কেননা পাহাড়ও তো ছোট ছোট পাথর দিয়েই তৈরি হয়।"
— (মুসনাদে আহমাদ)


করণীয়

  • গুনাহ ছোট বা বড় যাই হোক, সাথে সাথে তাওবা করা।
  • গুনাহকে হালকা না ভাবা।
  • নিয়মিত ইস্তিগফার করা।




তাজিয়া কি জায়েয?

তাজিয়া বের করা বা "তাজিয়া বার করা" মহররমের বিশেষ দিনে বিশেষ করে ১০ই মহররম (আশুরা) উপলক্ষে অনেক মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত একটি প্রথা, যা মূলত শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে করা হয় — বিশেষ করে শিয়া মুসলমানদের মধ্যে। তবে সুন্নি মুসলমানদের মধ্যেও কিছু অঞ্চলে এটি দেখা যায়।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে:

শিয়া মতানুসারে:

তাজিয়া একটি স্মারক প্রতীক যা কারবালার শহীদ হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর স্মরণে বানানো হয়। এটি তাদের কাছে ইমামের প্রতি ভালোবাসা, শোক ও আনুগত্যের প্রকাশ। তাই তারা এটিকে জায়েজ মনে করে।

সুন্নি মতানুসারে:

অধিকাংশ প্রখ্যাত সুন্নি আলেম যেমন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফি, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল — এ ধরনের প্রথাকে বিদআত বলেছেন, কারণ:

রাসূল (সা.) ও সাহাবারা কারবালার ঘটনার পরও এ ধরনের কোনো আনুষ্ঠানিক শোক পালন করেননি।

ইসলামে শোক পালন তিন দিনের বেশি জায়েজ নয়, শুধুমাত্র স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করে।



বাংলাদেশ/ভারত/পাকিস্তানে প্রচলিত রূপে তাজিয়া:

গান-বাজনা, ঢোল-তবলা, পায়ে হেঁটে মিছিল, আত্মপ্রহার (জান intentionally কষ্ট দেওয়া) — এগুলো ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়েজ।

কোনো মৃতব্যক্তিকে স্মরণ করা জায়েজ, কিন্তু তাতে বাড়াবাড়ি করা, নতুন রীতি চালু করা বিদআত হিসেবে ধরা হয়।



---

সারাংশ:

🔹 তাজিয়া বের করা ইসলামী শরিয়তের মূল উৎস (কুরআন ও সহীহ হাদীস) অনুযায়ী জায়েজ নয়।<br> 🔹 এটি একটি বিদআতি প্রথা, বিশেষ করে যদি তাতে ঢোল-বাদ্য, মাতম, মিছিল, ও শরীরকে আঘাত করার মতো কাজ জড়িত থাকে।


---

প্রস্তাবনা:
আপনি যদি কারবালার শহীদদের স্মরণ করতে চান, তাহলে দোয়া করুন, রোজা রাখুন, কুরআন তিলাওয়াত করুন, সাদকা দিন — এগুলো শরিয়তসম্মত এবং ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর প্রকৃত আদর্শ অনুসরণের উপায়।



মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে

🩺 আজ-জাহরাবি (Al-Zahrawi) — মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক

পুরো নাম: আবুল কাসিম খালাফ ইবনে আব্বাস আজ-জাহরাবি (Abu al-Qasim Khalaf ibn al-Abbas Al-Zahrawi)
জন্ম: আনুমানিক ৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু: ১০১৩ খ্রিস্টাব্দ
স্থান: আন্দালুস (বর্তমান স্পেনের কর্ডোভা)


---

🧠 পরিচিতি ও অবদান:

আজ-জাহরাবি ছিলেন ইসলামী স্বর্ণযুগের একজন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ও শল্যচিকিৎসক (surgeon)। ইউরোপে তিনি পরিচিত ছিলেন Abulcasis নামে।


---

📘 প্রধান গ্রন্থ:

আত-তাসরিফ (At-Tasrif)

৩০ খণ্ডের একটি বিশাল মেডিকেল এনসাইক্লোপিডিয়া।

এতে ২০০টির বেশি অস্ত্রোপচারের যন্ত্রের চিত্রসহ ব্যবহার বর্ণনা আছে।

এটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ইউরোপের মেডিকেল স্কুলে পাঠ্যবই ছিল।



---

🔧 সার্জারির অগ্রদূত:

আজ-জাহরাবিই প্রথম:

অস্ত্রোপচারে বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার শুরু করেন।

দাঁতের চিকিৎসা, চোখের অপারেশন, কান ও গলার সার্জারি বর্ণনা করেন।

সেলাই (sutures), ক্যাটগাট, চিমটি, এবং হেমোস্ট্যাট ইত্যাদির ব্যবহার শেখান।



---

🏥 চিকিৎসা শিক্ষায় ভূমিকা:

চিকিৎসা শুধু অভিজ্ঞতার উপর নয়, সঠিক পদ্ধতির উপর হওয়া উচিত — এই নীতি চালু করেন।

শিক্ষার্থীদের জন্য বিস্তারিত নির্দেশনা ও চিকিৎসা নীতিমালা দেন।



---

🌍 ইউরোপে প্রভাব:

তাঁর লেখা আত-তাসরিফ ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় ১২শ শতকে।

পশ্চিমা চিকিৎসা শাস্ত্র বহু বছর তার লেখা অনুসরণ করে চলে।



---

🏆 কেন তিনি গুরুত্বপূর্ণ:

✅ আধুনিক সার্জারির পথপ্রদর্শক
✅ প্রথম অস্ত্রোপচারবিদ যিনি যন্ত্র উদ্ভাবন করেন
✅ ইসলামী চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ইউরোপে পৌঁছে দেন


---



কোন সময় নামাজ পড়া নিষেধ।

নামাজ কিছু নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা নিষিদ্ধ (মাকরুহ তাহরিমি), যেগুলিতে নামাজ পড়লে সাধারণত তা গ্রহণযোগ্য হয় না, বিশেষ করে নফল নামাজ। এই নিষিদ্ধ সময়গুলো হলো:

🕓 ১. সূর্যোদয়ের সময় (সূর্য উঠার সময়):

  • যখন সূর্য ঠিক উঠতে শুরু করে, তখন থেকে প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।
  • এই সময় সূর্য পূজারীদের উপাসনার সাথে মিল থাকে বলে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

🕙 ২. ঠিক দুপুরে (যখন সূর্য ঠিক মাথার উপর):

  • যোহরের কিছু আগে, যখন সূর্য একদম মাথার ওপরে থাকে — এই সময়টুকুতে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।
  • তবে জুমার দিন এই নিষেধাজ্ঞা থাকে না।

🌇 ৩. সূর্য ডোবার সময় (মাগরিবের একটু আগে):

  • যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে, সেই সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। সাধারণত মাগরিবের ৫–১০ মিনিট আগে থেকে।

🕌 কোন কোন নামাজ এসব সময়ে পড়া যায়?

  • ফরজ নামাজ (যেমন কাযা হয়ে গেলে সেই ফরজ): এই সময়েও পড়া যায়, তবে অত্যন্ত প্রয়োজন হলে।
  • জানাজার নামাজ ও সিজদায়ে তিলাওয়াত: এইগুলোও বিশেষ কারণে কোনো সময় আদায় করা যেতে পারে।

সংক্ষেপে:

সময় নামাজ হয় না
সূর্য উঠার সময়
ঠিক মধ্য দুপুরে
সূর্য ডোবার সময়

নামাজের সময় যদি মুখে থুতু (লালা) চলে আসে

নামাজের সময় যদি মুখে থুতু (লালা) চলে আসে, তাহলে করণীয় বিষয়গুলো হলো:

🕌 যদি সামান্য থুতু হয়:

  • গিলে ফেলতে পারো, এতে নামাজ ভঙ্গ হবে না। এটা অনেক সময় স্বাভাবিকভাবেই ঘটে এবং শরিয়তে গুনাহের কিছু নেই।

🧕 যদি বেশি থুতু হয় বা অস্বস্তিকর লাগে:

  • বাম দিকে থুতু ফেলা উত্তম, তবে:
    • যদি মসজিদে থাকো বা আশেপাশে নাপাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে রুমালে, টিস্যুতে বা নিজের জামার এক পাশে (যা অপবিত্র না হয়) ফেলতে পারো।
    • বাম দিকে থুথু ফেলার হাদিস আছে, তবে সেটা এমনভাবে যাতে কারো প্রতি বা সম্মানিত দিকে না হয়।

❌ যে কাজগুলো না করা উচিত:

  • মসজিদের মধ্যে মেঝেতে থুথু ফেলা হারাম ও গুনাহের কাজ।
  • বারবার মুখ ঘোরানো বা ব্যস্ত হওয়া নামাজে খুশু-খুযু নষ্ট করে।

🔹 হাদিস থেকে প্রমাণ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"তোমাদের কেউ যখন নামাজে থাকে এবং মুখে থুতু আসে, তাহলে সে যেন বাম দিকে বা পায়ের নিচে ফেলে দেয়।"
— (সহিহ মুসলিম)



কে মাযহাব আবিষ্কার করেছেন।

"মাযহাব" (مذهب) শব্দটির অর্থ হলো: পথ, মতবাদ বা পন্থা। ইসলামে মাযহাব বলতে বোঝানো হয় কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে গঠিত নির্দিষ্ট একধরনের শরঈ ব্যাখ্যার পদ্ধতি, যা কোনো ইমামের অনুসারীরা গ্রহণ করেন। মাযহাব আবিষ্কার কোনো একক ব্যক্তির তৈরি করা বিষয় নয়, বরং সময়ের সাথে ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছে মুসলিম উলামাদের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও চিন্তার মাধ্যমে। তবে ইতিহাসে চারটি প্রধান সুন্নি মাযহাব রয়েছে, এবং সেগুলোর ইমামদের নাম অনুযায়ী চিহ্নিত করা হয়।

চারটি প্রধান সুন্নি মাযহাব ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা:

1. হানাফি মাযহাব –
প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
জন্ম: ৮০ হিজরি / ৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দ
অবস্থান: কুফা, ইরাক
এটি বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক অনুসৃত মাযহাব।


2. মালিকি মাযহাব –
প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম মালিক ইবন আনাস (রহ.)
জন্ম: ৯৩ হিজরি / ৭১২ খ্রিষ্টাব্দ
অবস্থান: মদিনা শরীফ
মূলত আফ্রিকার কিছু অংশ ও আরব বিশ্বের কিছু দেশে প্রচলিত।


3. শাফি’ি মাযহাব –
প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম মুহাম্মদ ইবন ইদরিস আশ-শাফি’ি (রহ.)
জন্ম: ১৫০ হিজরি / ৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ
অবস্থান: মিসর, মক্কা, মদিনা, ইরাক
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায় বেশ জনপ্রিয়।


4. হাম্বলি মাযহাব –
প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (রহ.)
জন্ম: ১৬৪ হিজরি / ৭৮০ খ্রিষ্টাব্দ
অবস্থান: বাগদাদ
আজকের সৌদি আরবে ব্যাপক প্রচলিত।



উপসংহার:

সুতরাং, সর্বপ্রথম মাযহাবের সূচনা করেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.), এবং তার নাম অনুসারে হানাফি মাযহাব গঠিত হয়। তবে এটি বলা ঠিক হবে না যে “তিনি মাযহাব আবিষ্কার করেছেন,” বরং বলা উচিত, তিনি কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েলের একটি বিশদ ব্যাখ্যা ও পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা পরবর্তীতে “মাযহাব” হিসেবে পরিচিত হয়।


নামাজে আমিন বলার বিধান কি?

নামাজে "আমিন" বলা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে কিছু ভিন্নমত আছে, বিশেষ করে তা সালাতের ধরন (জামাত বা একা) এবং মাযহাব অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

১. জামাতে (বিষেষ করে ফরজ নামাজে) আমিন জোরে বলা:

হানাফি মাযহাব:
ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার সময় আমিন আস্তে বলাই উত্তম। অনেকে মনেই বলে থাকেন, মুখে উচ্চারণ না করে।

শাফি'ী, হাম্বলী ও মালিকী (কোনো মত অনুযায়ী):
ইমাম যদি জোরে কিরাত পড়ে, তাহলে জোরে আমিন বলাও সুন্নত এবং উত্তম। সহীহ হাদীসে আছে, রাসূল (সা.) সাহাবীদের সাথে আমিন বলতেন, এবং তা মসজিদে গুঞ্জনের মতো শোনা যেত।

> হাদিস:
“যখন ইমাম ‘ওয়ালাদ-দোয়াল্লীন’ বলে, তখন তোমরাও ‘আমিন’ বলো।”
(বুখারী, মুসলিম)




২. একা নামাজ পড়লে:

আপনি জোরে বা আস্তে—দুইভাবেই আমিন বলতে পারেন। তবে সাধারণত আস্তে বলাই বেশি প্রচলিত।



---

সারসংক্ষেপ:

পরিস্থিতি আমিন বলার ধরন

জামাতে (হানাফি মতে) আস্তে
জামাতে (শাফি'ী/হাম্বলী মতে) জোরে
একা নামাজে জোরে বা আস্তে, উভয়ই বৈধ


ফতওয়া বা নির্দিষ্ট মত অনুসরণ করতে চাইলে নিজের মাযহাব অনুযায়ী আমল করাই উত্তম। তবে অন্য মাযহাবের কেউ ভিন্নভাবে বললে সেটিকে ভুল বলা উচিত নয়।



প্রশ্ন: “মাযহাব কি মানতেই হবে?”

প্রশ্ন: “মাযহাব কি মানতেই হবে?”

এর উত্তর ইসলামি জ্ঞান ও ফিকহের আলোকে দেওয়া যায়:


---

📌 সংক্ষেপে উত্তর:

হ্যাঁ, একজন সাধারণ মুসলমানের জন্য মাযহাব মানা প্রয়োজনীয়, কারণ সে নিজে কুরআন-হাদীস থেকে সরাসরি সবকিছু বুঝে শরীয়তের হুকুম নির্ণয় করতে অক্ষম। তবে, অন্ধভাবে মাযহাব মানা (যা কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট নির্দেশের বিপরীত হয়) সেটা ইসলাম অনুমোদন করে না।


---

🕌 মাযহাব কী?

“মাযহাব” শব্দের অর্থ: মতপথ বা পথচলা। ইসলামে এটি সাধারণত চারটি প্রধান ইমামের প্রতিষ্ঠিত ফিকহি মতবাদ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়:

1. হানাফি (ইমাম আবু হানিফা রহ.)


2. মালিকি (ইমাম মালিক ইবন আনাস রহ.)


3. শাফেয়ি (ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ইদরীস শাফেয়ি রহ.)


4. হাম্বলি (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ.)




---

🤔 কেন মাযহাব মানা দরকার?

১. সাধারণ মুসলিম কুরআন-হাদীসের সব বিষয়ে বিশদ জ্ঞান রাখে না। ২. কুরআন-হাদীসে অনেক বিষয় ইজতিহাদ বা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায়—যা আলিমগণ করেছেন। ৩. ইমামগণ তাঁদের গভীর জ্ঞান ও তাকওয়ার মাধ্যমে এসব ব্যাখ্যা করেছেন। ৪. এজন্য একজন সাধারণ মুসলমানের উচিত, একজন নির্ভরযোগ্য ইমামের অনুসরণ করা।


---

❌ কী ধরনের মাযহাব-মানা নিষিদ্ধ?

কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশের বিরুদ্ধেও মাযহাব মানা।

অন্য মাযহাবকে অবজ্ঞা বা গালমন্দ করা।

নিজের মাযহাবকে “শুধুমাত্র সঠিক” মনে করা ও বাকিদের “ভুল” বলা।



---

✅ ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:

🔹 ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন:

> “আমার কথা কুরআন-হাদীসের বিরোধী হলে, তা ছুঁড়ে ফেলে দাও।”



🔹 ইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন:

> “নবী (ﷺ) ছাড়া সবাইয়ের কথা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে, প্রত্যাখ্যানযোগ্যও।”




---

📚 উপসংহার:

আপনি যদি শরীয়তের ব্যাপারে গভীর জ্ঞানী না হন, তাহলে একটি মাযহাব অনুসরণ করাই নিরাপদ ও শরঈভাবে অনুমোদিত।

তবে মাযহাব মানতে গিয়ে যদি সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু পান, তাহলে তা খোলামেলাভাবে আলিমদের থেকে ব্যাখ্যা নিয়ে বুঝে নিন।


অজু করার সময় "বিসমিল্লাহ" বলা সুন্নত

অজু করার সময় "বিসমিল্লাহ" বলা সুন্নত, এবং অনেকে একে অজুর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করেন। তবে এটি অবশ্য (ফরজ বা ওয়াজিব) নয়।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা:

🔹 হাদীস থেকে প্রমাণ:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি অজুর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, তার অজু পূর্ণ হয় না।”
— (আবু দাউদ, হাদীস: ১০১)

🔹 ইমামদের মতামত:

  • হানাফি ও মালিকি মাযহাব: বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত বা মুস্তাহাব। না বললে অজু সহীহ, কিন্তু ফজিলত কমে যাবে।
  • হানবালি মাযহাব: এটি ওয়াজিব বলে থাকেন, ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে অজু শুদ্ধ হয় না।
  • শাফেয়ি মাযহাব: সুন্নত বলে গণ্য করেন।

সংক্ষেপে উত্তর:

✅ অজুর শুরুতে "বিসমিল্লাহ" বলা সুন্নত
❌ না বললে অজু ভেঙে যাবে না, তবে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবেন।

করণীয়:

অজু করার সময় বলা উচিত:

"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম"
বা সংক্ষেপে: "বিসমিল্লাহ" – তাও যথেষ্ট।


নামাজে কোথায় হাত বাঁধবেন?

নামাজে হাত বাঁধার স্থান ইসলামি চারটি প্রধান মাযহাব অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:


১. হানাফি মাযহাব:

  • হাত নাভির নিচে বাঁধা সুন্নত।
  • ডান হাত বাম হাতের উপর থাকবে, কব্জি বা কনুইয়ের কাছাকাছি বাম হাত ধরে রাখা।

২. মালিকি মাযহাব:

  • সাধারণত হাত খোলা (ছাড়া) রাখা হয় — অর্থাৎ, দুই হাত পাশে ঝুলে থাকে।
  • তবে কখনও কখনও হাত বাঁধাও বৈধ, কিন্তু তা খুব প্রচলিত নয়।

৩. শাফেয়ি মাযহাব:

  • হাত বুকের ওপর বাঁধা হয়।
  • ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি বা কনুই ধরে রাখা হয়।

৪. হানবলি মাযহাব:

  • হাত বুকের ওপর বা একটু নিচে বাঁধা যায়।
  • ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখা হয়।

সারসংক্ষেপ:

আপনি কোন মাযহাব অনুসরণ করেন, তার উপর নির্ভর করে হাত বাঁধার স্থান নির্ধারণ করা উচিত। যেহেতু সব মতই নির্ভরযোগ্য আলিমদের ইজতিহাদভিত্তিক, তাই যে মাযহাব আপনি মানেন তা অনুযায়ী পালন করাই উত্তম।

যদি আপনি বলেন আপনি কোন মাযহাব অনুসরণ করেন, আমি নির্দিষ্টভাবে জানাতে পারি কীভাবে হাত বাঁধবেন।

ওলী আল্লাহ্‌র থেকে কোন বিষয়ে উপদেশ গ্রহন করা

 ওলী আল্লাহ্‌র থেকে কোন বিষয়ে উপদেশ গ্রহন করা রসূল পাক (সঃ) এর হুকুমের অনুসরণ করা হয়

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِاللّٰهِ الثَّقَفِيْ رضى الله عنه قَالَ لَمَّا بَعَثَ رَسُوْلِ اللّٰهِ مَعَاذَآِلٰي الْيَمَنِ قَالَ يَامُعَذُ، بِمَ تَقْضِيْ؟قَالَ اَقْضِيْ بِكِتَابِ اللّٰهِ،قَالَ فَاِنْ جَاءَكَ اَمْرٌ لَيْسَ فِيْ كِتَابِ اللٰهِ وَلَمْ يَقْضِ فِيْهِ نَبِيُّهٗ وَلَمْ يَقْضِ فِيْهِ الصَّالِحُوْنَ قَالَ اَئُوْمُّ الْحَقَّ جَهْدِيْ قَالَ: رَسُوْلِ اللّٰهِ اَلْحَمْدُلِلّٰهِ اَلَّذِيْ جَعَلَ رَسُولَ  رَسُوْلِ اللّٰهِ يَقْضِ بِمَا يَرْضَيٰ بِهِ رَسُوْلِ اللّٰهِ

(তিরমিজি,আবু দাউদ,আহমদ শারীফ)

উচ্চারণ- আন মুহাম্মাদ বিন আব্দিল্লাহিস সাকাফি  রাদিয়াল্লাহু আনহু, কলা লাম্মা বায়াছা রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম, মায়াজা ইলাল ইয়ামিনি ক্বলা ইয়া মুয়াজ বিমা তাকদি? ক্বলা আকদি বি কিতাবিল্লাহি ক্বলা, ফায়িন যায়াকা আমরুন লাইসা ফি কিতাবিল্লাহি অলাম ইয়াকদি ফিহি নাবিয়ুহু অলাম ইয়াকদি ফিহিস সলিহুনা ক্বলা আউম্মুল হাক্কা যাহদি ক্বলা ফাক্বলা রসুলুল্লাহি সল্লালাহু আলাইহি ও সল্লাম  আলহামদু লিল্লা হিল্লাজি যায়ালা রসূলা রসুলিল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, ইয়াকদি বিমা ইয়ারদা বিহি রসুলুল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম।

   রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয (রাঃ) কে যখন ইয়ামনের শাসনকর্তা নিয়োগ করে প্রেরণের ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন। তোমার কাছে যখন কোন মোকদ্দমা পেশ করা হবে, তখন তুমি কিরূপে তার ফয়সালা করবে? তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র কিতাব অনুসারে ফয়সালা করবো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি আল্লাহ্‌র কিতাবে এর কোন সমাধান না পাও? তখন মুআয (রাঃ) বলেন, তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করেন, যদি তুমি রাসূলের সুন্নাতে এবং আল্লাহ্‌র কিতাবে এর কোন ফয়সালা না পাও? তখন তিনি বলেনঃ এমতাবস্থায় আমি চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে ইজতিহাদ করবো এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ শৈথিল্য করবো না। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআযের বুকে হাত মেরে বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূতকে এরূপ তাওফীক দিয়েছেন, যাতে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্ট অনুযায়ী বিচার করতে পারে।