গুদড়ী পরিধান করার শর্ত। condition to wear gudri

 

গুদড়ী/ মুরাক্কায়াত

গুদড়ী এটি একটি পোশাকের নাম যা আহলে সুফফাদের পরতে দেখা যায়। যা তারা নিজেদের শরীরে অতিরিক্ত একটি কাপড় হিসাবে পেঁচিয়ে রাখে। এই পেঁচিয়ে থাকা পোশাককে গুদড়ী বা মুরাক্কায়াত বলে।

আহলে সুফফাদের মতে, গুদড়ী পরিধান করা নবীদের সুন্নাত।

حدثنا أبو بكر بن إسحاق الفقيه ، أنبأ بشر بن موسى ، ثنا سعيد بن منصور ، ثنا خلف بن خليفة ، عن حميد الأعرج ، عن عبد الله بن الحارث ، عن ابن مسعود - رضي الله عنه - عن النبي - صلى الله عليه وآله وسلم - قال : " يوم كلم الله موسى كان عليه جبة صوف  ، وسراويل صوف ، وكمة صوف ، وكساء صوف ، ونعلان من جلد حمار غير ذكي

ইবনে মাসউদ রা্ঃ- আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন - নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) - তাঁর এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করুন - তিনি বলেছেন: "যেদিন আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে কথা বলেছিলেন, সেদিন তিনি একটি পশমী চাদর, পশমী পায়জামা, একটি পশমী জুব্বা, একটি সুফের টুপি এমনকি একজোড়া সুফের জুতো পরিধান করেছিলেন।

রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) নিজে সুফের জিনিস পরতেন,

ان أبي موسى قال :  كان رسول الله - صلى الله عليه وآله وسلم - يركب الحمار ، ويلبس الصوف ، ويعتقل الشاة ، ويأتي مراعاة الضيف

হজরত আবু মুসা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম পশমী কাপড় পরিধান করতেন এবং তিনি গাধায় আরোহণ করতেন।

এমনকি তিনি পশমী কাপড় পরিধান করার নির্দেশ দিয়েছেন

من كتاب الفردوس قال النبي (صلى الله عليه وآله وسلم): عليكم بلباس الصوف تجدوا حلاوة الايمان، وقلة الاكل تعرفوا في الآخرة. وإن النظر إلى الصوف يورث التفكر والتفكر يورث الحكمة والحكمة تجري في أجوافكم مثل الدم

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, " তোমরা পশমের পোশাক পরো, তাহলে ঈমানের মিষ্টতা পাবে, আর অল্প খাও, তাহলে আখেরাতে তুমি পরিচিত হবে।" পশমের দিকে তাকালে মনন আসে, মনন জ্ঞান আনে, আর জ্ঞান রক্তের মতো তোমার শরীরে প্রবাহিত হয়।

এছাড়া তিনি হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর উদ্দেশে বলেন

وقوله صلى الله عليه وسلم لعائشةَ رضي الله عنها -كما أخرجه الترمذي وغيرُه مما صحّح الحاكم إسناده-: «يا عائشة! إن أردتِ اللحوق بي فليكفك من الدنيا كزاد الراكب، وإياك ومجالسة الأغنياء، ولا تستخلفي ثوباً حتى ترقعيه

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেন, ইয়া আয়েশা কাপড়ের অপচয় করো না। যতক্ষন পর্যন্ত কাপড়ে তালি লাগিয়ে পরবে।

    হজরত হাসান রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি বদর যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবীকে দেখেছি তারা পশমের কাপড় পরিধানরত অবস্থায় যুদ্ধ করতে। এছাড়াও হজরত ওমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা হজরত ওয়ায়েজ করনী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহিকে পশমের তালিযুক্ত কাপড় পরধানরত অবস্থায় দেখেছি।

   মুহাম্মাদ ইবনে আলী তিরমিজি তার লিখিত কিতাব তারিখ উল মাশায়েখ এ লিখেছেন, হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি প্রথমদিকে পশমের পোশাক পরিধান করে নির্জনতা অবলম্বন করছিলেন। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম  কে স্বাপ্নে ইরশাদ করতে শুনলেন তোমার কি কর্তব্য নয় যে আমার সুন্নাত কে পুনঃজীবিত করার জন্য মানুষের সাথে মেলামেশা করবে। সাথে সাথেই তিনি নির্জনতা ত্যাগ করলেন। কিন্তু এরপরও তিনি মূল্যবান কাপড় পরিধান করতেন না।

আহলে সুফফাদের নিকট গুদড়ী একটি সন্মানিত ও অতিপ্রিয় পোশাক। এই পশাকে সন্মান পাওয়া যায় এবং লাঞ্ছনাকে শুষে নেয়। তারা বলেন, আমরা গুদড়ী ও গুদড়ী পরিধানকারীকে ভালবাসি।

গুদড়ী পরিধান করার শর্ত

আহলে সূফীরা সর্বদাই গুদড়ী পরিধান করতেন এবং তাদের অনুসারীদের গুদড়ী পরিধান করার আদেশ করতেন। গুদড়ী পরিধান করার শর্ত এবং কাফন পরিধান করার শর্ত একই। তবে সূফীদের ক্ষেত্রে গুদড়ী পরতেই হবে এমনটা নয়। কেননা, যেমন  অনেক মাশায়েখ গুদড়ী পরিধান করেছেন ঠিক তেমনি অনেক মাশায়েখ গুদড়ী ত্যাগ করেছেন।

গুদড়ী ত্যাগ করার কারণ

তারা সবসময় সফরে থাকতেন সুতারাং সাদা কাপড় খুব তাড়াতাড়ি ময়লা হয়ে যায় যা পরিস্কার করতে সমস্যা দেখা দেয়। সেজন্য তারা গুদড়ী ত্যাগ করেছিলেন।

গুদড়ীকে ভালবাসার কারণ

কেননা তারা নির্জনতা পছন্দ করতেন। এছাড়াও সাদা কাপড় শোক ও দুঃখের প্রতীক এবং শোকাহতদের পোশাক। যেহেতু পৃথিবীকে দুঃখের আবাসাস্থল বলা হয়। আর তারা পৃথিবীকে ত্যাগ করে আল্লাহর মোশহাব্বতে ডুবে থাকতেন। সেজন্য তারা গুদড়ী পরিধান করতেন এবং গুদড়ী ভালবাসতেন।

যদি তুমি আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য ও সূফীদের সাথে মিল রাখার জন্য এই পোশাক পরতে চাও তাহলে তোমাকে মোবারক।

গুদড়ী দুই ধরণের লোকের জন্য জায়েজ

১) যে দুনিয়া ত্যাগ করতে সক্ষম।

২) আল্লাহর প্রেমে ডুবে থাকতে সক্ষম।

কোন কামেল মুর্শিদের কোন মুরিদ পরকালের প্রার্থী হয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেন তখন তিনি তার ওই মুরিদকে তিন বছরের আদব শিক্ষা দান করেন। এবং তাকে তরিকতের পথে চলার নিয়ম কানুন বলে দেন। মুরিদ যদি তার পীরের  এই পরীক্ষায় পাস করেন তবে তার জন্য সৌভাগ্য। অন্যথায় পীর তাকে বলে দেন কোন তরিকত তোমাকে গ্রহন করছে না।

এই তিন বছরের পরীক্ষা

১) এক বছর সৃষ্টির খেদমত করা।

২) একবছর আল্লাহর দাসত্ব করা।

৩) একবছর নিজের অন্তরকে রক্ষণাবেক্ষণ করা।

যখন এই শর্তগুলী মুরিদ পুরন করতে সক্ষম হন তখন তাকে গুদরী পরিধান করার আদেশ দেন।



0 Post a Comment:

Post a Comment