বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা যখন উচ্চশিক্ষার কথা স্বরণকরি তখন আমাদের মনে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়।
মুসলিম জাতি হিসাবে আমাদের জেনে রাখা দরকার কে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন।
আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য দলিল-দস্তাবেজও
বলে, বিশাল ও অসামান্য এ কীর্তি-অবদান মুসলমানদের। গিনেজ বুকের রেকর্ড অনুসারে,
মরক্কোর ফেজ নগরীর কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়ই
হচ্ছে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউনাইটেড ন্যাশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন বা ইউনেস্কোও
স্বীকৃতি দিয়েছে, বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে মুসলিমরা।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন একজন পুণ্যবতী মুসলিম নারী।
ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আল ফিহরিয়া আল কুরাশিয়া ৮০০ ce কাইরুয়ান(তুনিসিয়া) তে জন্মগ্রহন করেন এবং
৮৮০ ce তে মারক্কো তে মৃত্যুবরণ করেন। তার বাবা মুহাম্মদ আল-ফিহরি ছিলেন,
ফেজ নগরীর বিত্তশালী ব্যবসায়ী। আল-ফিহরি পরিবার ফেজে আসেন নবম শতাব্দীর প্রথম দিকে।
তাদের সঙ্গে কারাওইন থেকে সমাজের বেশ কিছু লেখকও ফেজে এসে নগরীর পশ্চিমাংশে বসবাস শুরু
করেন। ফাতিমা আল ফিহরি ও তার বোন মরিয়ম আল-ফিহরি উভয়েই ছিলেন সুশিক্ষিত। তারা উত্তরাধিকার
সূত্রে পিতার কাছ থেকে প্রচুর অর্থ-বিত্ত লাভ করেন। ফাতিমা তার অংশের সব অর্থ খরচ করেন লেখকদের জন্য
সুবিধাসম্পন্ন একটি মসজিদ তৈরির কাজে। ৮৫৯ সালে কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের অংশ
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কেবল ইবাদতের স্থান না হয়ে এই মসজিদ শিগগিরই হয়ে ওঠে ধর্মীয়
নির্দেশনা ও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্র। ইতালির বোলোনায় যখন প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠিত হয়, তারও আগে কারাওইন হয়ে ওঠে বিশ্ব বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়।
শুরুতে এটি ছিল ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র। পরে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে
পারিপার্শ্বিক বিষয়য়াদি পড়ানো হয়। অল্প সময়ে এর ছাত্রসংখ্যা দাঁড়ায় আট হাজারে। তারা
সেখানে চিকিৎসাবিদ্যা থেকে শুরু করে ইতিহাস-ভূগোলসহ অনেক বিষয়েই উচ্চশিক্ষা লাভ করতে
থাকেন। ফেজকে তখন বলা হতো,
‘পাশ্চাত্যের বাগদাদ’—‘বাগদাদ অব দ্য ওয়েস্ট’।
১৯১২-৫৬ সময়ে মরক্কো ফ্রান্সের অধীনে ছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
এসে দাঁড়ায়। ইউরোপের ষড়যন্ত্রের শিকার হয় ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওই
সময় সেখানে পরীক্ষা ও ডিগ্রি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যযুগে মুসলমান ও ইউরোপীয়দের
মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিষয়ক জ্ঞান বিনিময়ের ক্ষেত্রে সুবিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান
রাখে। অগ্রণায়ন পণ্ডিত ইবনে মাইমুন,
আল-ইদ্রিসি,
ইবনে আরাবি,
ইবনে খালদুন,
ইবনে খতিব,
আল-বিতরুজি (অ্যালপে ট্রেজিয়াম),
ইবনে হিরজিহিম ও আল ওয়্যাজ্জেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্র বা শিক্ষক ছিলেন।
অনেক অমুসলিমও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অমুসলিম
অ্যালামনি ছিলেন- ইহুদি দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ মুসা বিন মাইমুন বা মাইমোনাইডস।
0 Post a Comment:
Post a Comment